আদতে রুশ প্রযুক্তিতে যে ট্যাংক তৈরি করা হয়েছিল, তার খোলনলচে সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সোমবার সেই বদলে ফেলা ট্যাংকটিকেই প্রথমবারের জন্য প্রকাশ্য়ে আনা হল। যার পোশাকি নাম, টি-৯০ ‘ভীষ্ম’।
সংশ্লিষ্ট বিষয়টি সম্পর্কে যাঁরা অবহিত, সেই সব আধিকারিকরা বলছেন, সামরিক ক্ষেত্রে যেকোনও অনভিপ্রেত পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত, প্রযুক্তিগত এই সাফল্য আরও একবার তা প্রমাণ করল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমনই এক আধিকারিক এই প্রসঙ্গে জানান, মূল ট্যাংকটির প্রত্যেকটি অংশ খুলে ফেলা হয়েছিল। প্রত্যেকটি নাট, প্রত্যেকটি বল্টু আলাদা করে ফেলা হয়েছিল। তারপর সেগুলিকে একেবারে নতুন করে পুনরায় জোড়া লাগানো হয়। সম্পূর্ণ নতুন করে তৈরি করা হয় ওই ট্যাংক।
ওই আধিকারিকের কথায়, ‘সুনির্দিষ্ট প্রযুক্তি এবং পুনরায় জোড়া লাগানোর কৌশল ব্যবহার করে ২০০টিরও বেশি ভাগে এবং উপবিভাগে অত্যন্ত সতর্কভাবে ওই ট্যাংক জোড়া লাগানো হয়েছে ও সেটিকে নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।’
এদিন এই পুনর্গঠিত ট্যাংকের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, তাতে অংশ নেন সেনাপ্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী।
তথ্য বলছে, টি-৯০ ট্যাংকগুলি চেন্নাইয়ের নিকটবর্তী আভাদিতে অবস্থিত ভারী যানবাহন নির্মাণ কারখানা (এইচভিএফ)-এ রাশিয়ার লাইসেন্সের অধীনে নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী মোট ১,৬৫৭টি টি-৯০ ট্যাংক নির্মাণের বরাত দিয়েছে। এবং বর্তমানে তারা প্রায় ১,৩০০টি এমন ট্যাংক ব্যবহার করছে। প্রাথমিক ধাপে টি-৯০ ট্যাংক পুনর্নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে।
আদতে রুশ ‘বংশোদ্ভূত’ এই ট্যাংক একাধিক কারণে যেকোনও দেশের সামরিকবাহিনীর অন্যতম সম্পদ হিসাবে পরিগণিত হতে পারে। কারণ, এর তোপ দাগার ক্ষমতা মারাত্মক, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চালিয়ে নিয়ে যাওয়াও খুব সহজ এবং এই ট্যাংক অত্যন্ত নিরাপদ।
দিল্লি ক্যান্টনমেন্টের ৫০৫ আর্মি বেস ওয়ার্কশপে কর্পোরেশন অফ ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়র্স (ইএমই)-এর মাধ্যমে এই ট্যাংক পরিচালনা করা হয়েছিল।
এই বেস ওয়ার্কশপের টেকনিশিয়ানরা, বিশেষভাবে নির্মিত বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে এবং যেসব সংস্থা স্বতন্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করে নানা ধরনের সরঞ্জাম নির্মাণ করে, তাদের সরবরাহ করা টেস্ট বেঞ্চের দ্বারা নবনির্মিত টি-৯০ ট্যাংকের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখতেন।
সংশ্লিষ্ট এক আধিকারিক এই মর্মে জানিয়েছেন, এই ট্যাংকটিকে এমনভাবে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে যে, যেকোনও ভূমিরূপেই অনায়াসে যাতায়াত করতে পারবে। যে সুবিধা মূল ট্যাংকে ছিল না।
সূত্রের দাবি, ভারতীয় সেনাবাহিনী ‘পরিবর্তনের দশক’-এর মধ্য়ে দিয়ে এগিয়ে চলেছে। এই মুহূর্তে সেনার অন্যতম লক্ষ্য হল, যত বেশি করে সম্ভব প্রযুক্তিগত উন্নতির মাধ্যমে দেশের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিবারে নতুন এক সদস্য এসেছে। যার নাম ‘জোরাবর’। ওজনে হালকা, অত্যাধুনিক এই ট্যাংক খুব সহজে, এবং অতি দ্রুত পার্বত্য এলাকায় পৌঁছে যেতে পারে।
প্রথমবারের জন্য বিকানেরের কাছে মহাজান ফায়ারিং রেঞ্জে এই ট্যাংকটির কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এই ট্যাংকটি যৌথভাবে নির্মাণ করেছে ডিআরডিও এবং লারসেন অ্য়ান্ড টার্বো।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে ভারতীয় সেনার ৩৫৪টি হালকা ওজনের ট্যাংক প্রয়োজন। জোরাবর সেই চাহিদা পূরণ করতে চলেছে। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই একেবারে শুরু থেকে এই ট্যাংক নির্মাণ করা হয়েছে।